এম.মনছুর আলম,চকরিয়া :
ধানক্ষেতে ধানের ক্ষতিকর পোকামাকড় সনাক্ত করার জন্য ফাঁদ হিসেবে অন্ধকারে বাতি জ্বালানো হয়।কক্সবাজারের চকরিয়ায় আঠার ইউনিয়ন ও পৌরসভা এলাকায় চলতি মৌসুমে আমন ধানক্ষেতে ‘আলোর ফাঁদ’ বসিয়ে পোকা-মাকড়ের উপস্থিতি জরিপের কাজ শুরু হয়েছে। চকরিয়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কৃষি বিভাগের কর্মীরা কৃষকদের সহযোতিায় ‘আলোর ফাঁদ’ বসিয়ে পোকামাকড় সনাক্তকরণ কর্মসূচি এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। রাতের বেলায় বৈদ্যুতিক ভাল্বের আলোতে ঝাঁকে ঝাঁকে উড়ে এসে জড়ো হয় এসব পোকামাকড়।পোকামাকড়ের দল বৈদ্যুতিক ভাল্বের নিচে রাখা গামলা ভর্ত্তি সাবান মাখা ফেনায় পানিতে পড়লে ওই সব পোকামাকড় আটকে পড়ে উঠতে পারেনা।এরপর কৃষি বিভাগের কর্মীরা ধানের জন্য ক্ষতিকর পোকা সনাক্ত করা হয়।এনিয়ে কৃষকদের ব্যবস্থা নেওয়ার পরামর্শ দেন কৃষি বিভাগের দায়িত্বরত কর্মকর্তারা।
চকরিয়া উপজেলায় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পরামর্শে বিভিন্ন এলাকায় আমন ধান রক্ষায় ২৫০টির মতো ‘আলোর ফাঁদ’পেতেছে কৃষকরা।ফসলের জন্য ক্ষতিকর পোকামাকড়ের উপস্থিতি জরিপ করতে আমনক্ষেতে এ পদ্ধতিতে আলোর ফাঁদ স্থাপন করা হচ্ছে ।
চকরিয়া উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে উপজেলার ১৮ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভার ৪৮হাজার একর জমিতে আমন চাষাবাদে ৫১ব্লকে ২৫০টির মতো আলোক ফাঁদ স্থাপনের মাধ্যমে পোকামাকড়ের উপস্থিতি সনাক্ত করণ ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য কৃষককে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।পোকা দমনে আলোক ফাঁদে ইতিমধ্যে সর্বক্ষেত্রে প্রশংসিত হয়েছে।বিষ মুক্ত ফসল উৎপাদনের জন্য কৃষি বিভাগ চলতি মৌসুমে আমনক্ষেতে আলোক ফাঁদ পদ্ধতি চালু করেছে।এ আলোক ফাঁদ বসানোর কারণে পোকা দমনের ক্ষেত্রে ব্যাপক ভূমিকা পালন করছে।
এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি বিভাগের উপ-সহকারি উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা মো.মহিউদ্দিনের কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান,সমন্বিত বালাই ব্যবস্থা প্রকল্পের আওতায় এবং কৃষক উদ্বুদ্ধকরণের মাধ্যমে ‘আলোর ফাঁদ’গুলো স্থাপন করা হচ্ছে।আমন ধানের বয়স এখন বাড়ন্ত ও কুচিবস্থায়। এ অবস্থায় পোকামাকড়ের আক্রমন থেকে চাষাবাদকৃত আমন রক্ষার জন্য আলোক ফাঁদের মতো উন্নত পদ্ধতি চালু করা হয়েছে। এ পদ্ধতির ফলে ধান গাছে সহজেই ক্ষতিকর পোকা মাকড়ের উপস্থিতি সনাক্ত করা যাবে।এতে চাষীদের কাঙ্কিত ফসল উৎপাদনে পোকা কোনো বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারবে না এবং ফলনও ভালো হবে। কৃষকরা পাবেন তাদের কাঙ্কিত ফসল।
চকরিয়া উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো.আতিক উল্লাহর কাছে আলোক ফাঁদ ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন,ফসলের ক্ষতিকর পোকামাকড় নির্ণয় ও দমনে ‘আলোর ফাঁদ’ একটি সফল ও পরিবেশবান্ধব কৃষি ব্যবস্থাপনা।এ পদ্ধতি ব্যবহার করে চাষীরা কোনো খরচ ছাড়াই খুব সহজে ফসলের ক্ষতিকর পোকা শনাক্ত করে পোকার হাত থেকে ফসল রক্ষা করতে পারবেন।আলোর ফাঁদে আটকা পড়া পোকা মাকড় সনাক্ত করেন কৃষি বিভাগের মাঠ কর্মীরা।ফাঁদ স্থাপনের মাধ্যমে মূলত পোকার উপস্থিতি নির্ণয় করা হয়।ফসলের ক্ষতিকর পোকা-মাকড়ের উপস্থিতি জরিপ করার জন্য ১৮ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভা এলাকায় ২৫০টি আলোর ফাঁদ স্থাপন করা হয়েছে।আলোর ফাঁদ বসিয়ে পোকা দমন অব্যাহত থাকায় ধান থেকে পোকা ক্রমেই কমে যাচ্ছে।এতে বাড়ছে ক্ষেতের ফসলের উৎপাদন এবং লাভবান হচ্ছে প্রান্তিক কৃষকরা।এ কারণেই ফসলের শত্রু ক্ষতিকর পোকা-মাকড়ের সনাক্তকরণ কর্মসূচি জোরদার করা হয়েছে বলে তিনি জানান।##